ভোরে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের সোয়া এক কিলোমিটার জুড়ে ট্রাকের সারি। ট্রাক থেকে শাক-সবজি নামাচ্ছেন আড়তদাররা। আবার খুচরা বিক্রেতারা মালামাল ক্রয় করে তুলছেন ট্রাকে। আড়তে জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ মহাসড়কের ওপরেই সবজি বিক্রি করছেন। আবার অনেকে ট্রাক থেকে পণ্য না নামিয়ে সরাসরি বেছে দিচ্ছেন।
খুচরা বিক্রেতারা স্বাভাবিক নিয়মে আড়ৎ থেকে সবজি ক্রয় করলেও বিভিন্ন শাক বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ট্রাক থেকে নামানোর আগেই। বৃষ্টির কারণে পর্যাপ্ত শাক সরবরাহ করতে না পারায় এবং আড়ৎ কর্দমাক্ত থাকার কারণে ট্রাকের মধ্যে রেখেই পণ্যটি বিক্রি করছেন পাইকাররা।
তিন অংশে বিভক্ত বাজারটির এক অংশে আড়ৎ, অপর অংশে খুচরা শাক-সবজি, ফলমূল এবং অন্য অংশে আলু ও মসলার পাইকারি এবং মুরগি ও মাছের খুচরা বাজার বসে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় বসে পাইকারি বাজার। চলে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত। তবে, রাত ১০টার পর জমজমাট হয়ে ওঠে পাইকারি বাজারের কেনাকাটা। সকাল ৭টার পর আড়তগুলো খালি হতে থাকে।
এরপর খুচরা বাজারে বিক্রি শুরু হয়। এখানে কেনাকাটা চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। বাজারে প্রতিদিন পাইকারি মালামাল বিক্রির দেড় শতাধিক আড়ৎ ও খুচরার চার শতাধিক দোকান বসে। বাজারের ইজারাদারদের অধীনে তিন শতাধিক লোকবল রয়েছে, যারা বাজার তদারকি ও খাজনা আদায় করে থাকেন।
ব্যবসায়ীদের সূত্র মতে, আড়তে যেসব শাক-সবজি বিক্রি হয় তার বেশির ভাগ আসে রাজশাহী, বগুড়া, মাগুরা, ঠাকুরগাঁও, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, যশোর, জামালপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে। কিছু সংখ্যক মালামাল আসে কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে।
বাজার থেকে মালামাল ক্রয় করেন কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের খুচরা বিক্রেতারা। এছাড়া, ঢাকার কিছু খুচরা বিক্রেতারাও পণ্য ক্রয় করেন নিমসার থেকে।
ব্যবসায়ীরা জানান, লাগাতার বৃষ্টির কারণে শাক-সবজির সরবরাহ কম। তবে চাহিদা ব্যাপক, দামও বেশি। দাম বেশি হওয়ায় মালামাল সরবরাহ কম হলেও বাজারের দৈনিক গড় বিক্রিতে তেমন কোনো তারতম্য হচ্ছে না।
বাজারে পাইকারি বিক্রির শীর্ষে রয়েছে কচুর ছড়া, আলু, শসা ও করলা। বর্তমানে দৈনিক গড়ে এক হাজার টন ছড়া, ৮০০ টন শসা, আড়াই হাজার টন আলু ও ৬০০ টন করলা বিক্রি হচ্ছে এ বাজারে। মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টন।
আড়তদাররা জানান, শীত ঘনিয়ে আসলে বাজারে তরকারির সরবরাহ প্রচুর বাড়বে। টাকার অংকে বেশি না হলেও পরিমাণে বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ শাক-সবজি বেশি বিক্রি হবে। ইতোমধ্যে কুমিল্লার গোমতী নদী তীরবর্তী অঞ্চলে চাষকৃত মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে আসতে শুরু করেছে। বেড়েছে স্থানীয় কৃষকদের আনাগোনাও।
নিমসার বাজারের একাংশের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এ বাজারে দিনে এক কোটি টাকা লেনদেন হয়। বৃষ্টির কারণে বাজারে প্রবেশে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
বুড়িচং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, ‘নিমসার বাজার এ অঞ্চলের বড় বাজার। বাজারটিতে জলাবদ্ধতার কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা সমস্যা নিরসনের জন্য কাজ করব।’